আমিনুর রহমান হাসান
ভূমিকম্প এটা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দাদের প্রতি এক নীরব সতর্কবাণী। আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের প্রতি সবসময়ই সহনশীল। তবে আল্লাহ তায়ালার নেজাম হলোÑ বান্দাহ যখন রবের নাফরমানিতে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তখন আল্লাহ তাঁর আজাবের খানিকটা ইঙ্গিত দেন। বান্দার প্রতি রবের অগাধ ভালোবাসার কারণেই এই ইঙ্গিত দেন। না হয় আল্লাহ চাইলে পারতেন মন্দ কৃতকর্মের জন্য কোনোরকমের ইঙ্গিত ছাড়াই আমাদের ধ্বংস করে দিতে। কিন্তু আল্লাহ সেটা করেন না। কারণ আল্লাহ আমাদের অনেক ভালোবাসেন।
পূর্ববর্তী নবীদের অনুসারীদের ইতিহাস ঘাঁটাঘাঁটি করলে আমরা পাই, তাদের মন্দ কৃতকর্মের জন্য আল্লাহ সাথে সাথে শাস্তি দিয়ে দিতেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ ঘোষণা করেন, আমি কওমে আদ ও কওমে সামুদ এবং কওমে লুত ও মাদায়েন সম্প্রদায়ের অবাধ্যতার জন্য তাদের ওপর গজব অবতীর্ণ করেছি। আদ জাতির নবী ছিলেন হজরত হুদ আ:। সামুদ জাতির নবী ছিলেন হজরত সালেহ আ:। কওমে লুতের নবী ছিলেন হজরত লুত আ: এবং মাদায়েনের নবী ছিলেন হজরত শোয়াইব আ:। আদ জাতিকে আজাব দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে মূর্তিপূজা পরিত্যাগ না করার কারণে। সামুদ জাতিকে ভূমিকম্প দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে আল্লাহর নিদর্শন বিশেষ একটি উট হত্যা করার কারণে। কওমে লুতকে ভূখণ্ড উল্টে পাথর বৃষ্টি দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে সমকামিতার কারণে। মাদায়েন জাতিকেও ভূমিকম্প দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। তাদের গুরুতর কয়েকটি অপরাধ হলো এক আল্লাহর আনুগত্য না করা, মাপে কম দেয়া, সম্পদ আত্মসাৎ করা, মানুষকে ধর্ম পালনে বাধা দেয়া (সূরা আরাফ : ৬৫-৮৭)। আমাদের নাফরমানি বা অবাধ্যতার কারণে যদি অন্যান্য নবীর অনুসারীদের মতো আমাদেরকে শাস্তি দেয়া হতো, তাহলে আমরা স্বীয় মন্দ কৃতকর্মের জন্য অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে যেতাম। প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা সা: তাঁর উম্মতদেরকে এরকম গজব দিয়ে শাস্তি না দেয়ার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন। প্রিয় নবীর দোয়ার উসিলায় আমরা এখনো ধ্বংস হইনি। রাসূলুল্লাহ সা: স্বীয় উম্মতের জন্য তিনটি দোয়া করেছেনÑ
১. হে আল্লাহ! আমার উম্মতকে অন্যান্য উম্মতের মতো কোনো জন্তুতে (পশু) পরিণত করো না। আল্লাহ তায়ালা এ দোয়া কবুল করেছেন।
২. হে আল্লাহ! অন্যান্য উম্মতের মতো আমার উম্মতকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করো না। আল্লাহ তায়ালা এ দোয়াও কবুল করেছেন।
৩. হে আল্লাহ! আমার উম্মতের মধ্যে যেন খুন-খারাবি না হয়, আল্লাহ তায়ালা এ দোয়া কবুল করেননি (তাফসিরে নুরুল কুরআন)।
রাসূলুল্লাহ সা:-এর দোয়া থেকে বোঝা যায়, আল্লাহ তায়ালা তাঁর দোয়ার উসিলায় আমাদেরকে আকৃতি পরিবর্তনসহ দুনিয়ার কঠোর শাস্তি থেকে নাজাত দিয়েছেন। আমরা যে ভূমিকম্পের সম্মুখীন হই এটাও আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আমাদের নাফরমানির এক ধরনের শাস্তি। তাছাড়া ঘন ঘন ভূমিকম্প কিয়ামতের নিদর্শনও। হজরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিতÑ নবী করিম সা: বলেন, ‘শেষ জামানার উম্মতের মধ্যে ভূমিধস, রূপবিকৃতি ও পাথর বর্ষণের শাস্তি আবর্তিত হবে। বললাম, সৎ মানুষ থাকতেও আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো? নবীজী সা: বললেন, ‘অপরাধ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেলে তাই হবে’ (তিরমিজি-২১৮৫)।
হজরত ইমরান বিন হুছাইন রা: বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যখন গান-বাদ্য এবং অশ্লীল নর্তকীদের আবির্ভাব হবে তখন ভূমিধস ও রূপবিকৃতি এবং পাথর বর্ষণের শাস্তি ঘটবে’ (তিরমিজি-২২১২)। উপরোল্লিখিত কুরআনের আয়াত ও হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ভূমিকম্প ও অন্যান্য শাস্তি আমাদের মন্দ কৃতকর্মের জন্যই হচ্ছে। আমাদের উচিত হলোÑ মন্দ কৃতকর্মের প্রতি অনুতপ্ত হয়ে তা পরিত্যাগ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। আল্লাহ পাক আমাদের সবাই তাউফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমীন।