রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)সংবাদদাতা :
৫০ শয্যাবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্স চলছে মহা সংকট নিয়ে। একদিকে জরুরি মুমুর্ষ রোগীর এম্বুলেন্স নিয়ে সরু প্রবেশ পথে সময়মতো প্রবেশ করতে হিমসিম খায়। একমাত্র ভরসা সেখানে ব্যাটারি চালিত অটোরিক্স। গাড়ীর আকার বড় হলেই আটকে যায় রাস্তায়। এতে জরুরী চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা পড়েন চরম বিপাপে। অন্যদিকে উপজেলার একমাত্র সরকারি হাসপাতালটি দরিদ্র রোগীদের একমাত্র ভরসা হলেও ৯জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছেন তারা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ডেমরা কালীগঞ্জ সড়কের মুশুরী শাহাপুর এলাকায় রয়েছে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবস্থান। এ হাসপাতালে প্রবেশের জন্য রয়েছে একটি মাত্র সরু রাস্তা। সূত্রমতে ওই রাস্তাটি মাত্র ৮ফুট। পাশেই রয়েছে মুশুরী খাল। একসময় এ খাল দিয়ে নৌ চলাচল করলেও স্থানীয়দের দখলের কারনে এটি এখন মরা খাল। তবে খানাখন্দে ময়লার ভাগারে পরিণত হওয়া এ খালের পাশ দিয়ে চলা এ ৮ফুট প্রস্ত প্রায় ৪শ মিটার রাস্তার জন্য চিকিৎসক, রোগী স্বজন ও দর্শনার্থীদের যাতায়াতকারী যানবাহন আনায়াসে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে সামান্য ত্রুটিতেই আটকে যায় এ সরু রাস্তা।
দীর্ঘ বছর ধরে এমন ভোগান্তি হলেও উপজেলা পরিষদ থেকে নেয়া হচ্ছে না কোন উদ্যোগ। মাঝে মাঝে মাপঝোঁক করে রাস্তা বাড়ানোর আশ্বাস দিলেও কোন সমাধান খুঁজে পাচ্ছেন না স্থানীয়রা।
এছাড়াও হাসপাতালের সামনে নিয়মিত যানজট ও অটো রিক্সা পার্ক করে রাখায় ভোগান্তি বাড়ে। এসব নিয়ে রূপগঞ্জ থানা পুলিশকেও পরিস্থিতি ম্যানেজ করতে দেখা গেছে। রূপগঞ্জ থানার উপ পরিদর্শক মেরাজুল ইসলাম সোহাগ বলেন, মাঝে মাঝে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার জরুরী সহযোগীতা চেয়ে থানায় ফোন করেন। প্রায়ই সাধারন ডিউটি রেখে এ হাসপাতালে ডিউটি করতে হয়। তিনি বলেন, হাসপাতালের প্রবেশ পথ প্রশস্ত করতে এ সমস্যা তৈরী হতো না।
অপরদিকে হাসপাতালসূত্রে আরো জানা যায়, দীর্ঘ ২ বছর যাবৎ নানা সংকটসহএনেস্থাসিয়া না থাকায় বন্ধ রয়েছে জরুরি প্রসুতি সেবা সিজার অপারেশন পদ্ধতি। এতে রোগী ভোগান্তি চরমে পৌছলেও কবে এর সমাধা হবে জানে না কর্তৃপক্ষ।
সবচেয়ে গুরুতর দরিদ্র প্রসুতি মায়েদের চিকিৎসায় কেবল একজন গাইনি বিশেষজ্ঞ থাকলেও জরুরী প্রয়োজনে সিজার অপারেশন করাতে পারছেন না। কারন , দীর্ঘ প্রায় ২ বছর যাবৎ এ হাসপাতালে এনেস্থাসিয়া বা অবশ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ নাই। এ অযুহাতে অতি দরিদ্র প্রসুতি মায়েরাও বাধ্য হচ্ছেন অতিরিক্ত খরচ বহন করে বেসরকারী হাসপাতালের সিজার অপারেশন করাতে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) নূরজাহান আরা খাতুন বলেন, হাসপাতালের প্রবেশ পথ সরু হওয়ায় এম্বুলেন্সসহ সাধারন যানবাহন প্রবেশে হিমসিম খেতে হয়। থানা পুলিশের সহায়তা নিতে হচ্ছে। তবে এসব বিষয় সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ১ রূপগঞ্জ আসনের এমপি বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতিক। আর হাসপাতালটিতে এনেসথেসিয়া, মেডিসিন, শিশু, কার্ডিওলজি, অর্থোপেডিকস, সার্জারি, চর্ম ও যৌন, (নাক-কান-গলা)সহ নয়জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পদ শুন্য রয়েছে। খুব শীঘ্রই এসব সংকট দূর হবে আশা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাসপাতালের প্রবেশের জন্য মূল সড়ক নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ডেমরা কালীগঞ্জ সড়কের মুশুরী থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার সড়কে খানাখন্দে ও গর্তের কারণে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। স্থানে স্থানে গর্তের সৃষ্টি আবার কোথাও সড়ক পাশের খাদে হেলে পড়ায় চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষের অযুহাত ভারী যানবাহন চলাচল অন্যদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ টেকসই নির্মাণে ব্যর্থ ঠিকাদার।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবী , উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয়ে রোগীরা এ সড়কে যাতায়াত করছেন। এতে গর্ভবতি মায়েদের চরম বিপদের কারন হচ্ছে। হাসপাতালের প্রবেশের মূল সড়ক ও প্রবেশ পথ উভয়ের এমন বেহাল দশা থাকলেও সংস্কারের উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এ পথে চলাচলরত যানবাহন ও সাধারণ লোকজন।
এসব বিষয়ে এলজিইডি বিভাগের রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী জামাল উদ্দীন বলেনহাসপাতালেরপ্রবেশ পথ ও ডেমরা কালীগঞ্জ সড়কের কাজের জন্য অফিসিয়াল প্রক্রিয়া চলমান। খুব শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।