জাহাঙ্গীর মাহমুদ :
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের সেজান জুস কারখানার আরো এক শ্রমিকের দেহাবশেষ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) নিহতের পরিবারের কাছে দেহাবশেষ বুঝিয়ে দেয়া হয়। নিহত হলেন- নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ইউসুফের ছেলে ইসমাইল হোসেন মহিউদ্দিন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (০৯ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পুড়ে যাওয়া ওই ভবনের চারতলায় সিআইডির নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিস ও থানা-পুলিশের সহায়তায় তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। তল্লাশি চালিয়ে আরও একজনের মাথার খুলিসহ পুরো শরীরের কঙ্কাল ও হাঁটুর নিচের অংশের হাড় উদ্ধার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) অভিযান চালিয়ে ওই ভবনের চারতলা থেকে দুটি মাথার খুলি ও হাড়ের অংশ উদ্ধার করেছিল সিআইডি।
লাশ হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করে সিআইডির পরিদর্শক আতাউর রহমান জানান, আমাদের কাছে তিনটি লাশের সন্ধান চেয়ে পরিবার আবেদন করে। সেই আবেদনের পর একজনের লাশ আজ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সিআইডির নারায়ণগঞ্জ অফিসের সহকারী পুলিশ সুপার মো. হারুন অর রশিদ জানান, সেজান জুস কারখানার শ্রমিক মহিউদ্দিন, সাজ্জাদ ও লাবনির পরিবারের অভিভাবকদের অভিযোগ কারখানায় কর্মরত ওই তিন শ্রমিক আগুন লাগার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। ভবনে যাদের মরদেহ পাওয়া গিয়েছিল, তাদের মধ্যে এই তিনজনের মরদেহ শনাক্ত হয়নি। তাদের এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডি ফায়ার সার্ভিসকে চিঠি দেয়।
৭ সেপ্টেম্বর ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম এবং রূপগঞ্জ থানা পুলিশের সহায়তায় ভবনটিতে অভিযান চালিয়ে তল্লাশি করা হয়। সেদিন ভবনের চতুর্থ তলা থেকে তিনটি হাড়ের অংশ উদ্ধার করা হয়।
সহকারী পুলিশ সুপার আরও জানান, দ্বিতীয় দফায় ৯ সেপ্টেম্বর ওই ভবনের চারতলায় তল্লাশি চালিয়ে মাথার খুলিসহ পুরো শরীরের কঙ্কাল ও হাঁটুর নিচের অংশের হাড় উদ্ধার করা হয়েছে। যে স্থান থেকে এসব উদ্ধার করা হয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে নিহতরা ওই রুমে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে বের হতে পারেননি। রুমটি মূলত নারীদের পোশাক বদলানোর রুম।
তিনি বলেন, এক ব্যক্তির ডিএনএ পরীক্ষায় শনাক্তের পর তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
গত ৮ জুলাই বিকেলে রূপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের সেজান জুস কারখানার ১৪ নম্বর গুদামের ৬তলা ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে ভবন থেকে লাফিয়ে পরে ৩ জন মারা যান এবং ১০ জন আহত হন। প্রায় ১৯ ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
পরদিন বিকেলে আগুন নিভিয়ে ফেলার পর ৪৮ জনের পোড়া মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ঘটনার পর ৪ আগস্ট ডিএনএ পরীক্ষা শেষে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে প্রথমে ২৬ জন ও পরবর্তীতে ২১ জনের পোড়া মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ ঘটনায় রূপগঞ্জ থানাধীন ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে কারখানার মালিক আবুল হাসেমসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে রূপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে মামলাটি তদন্তভার সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়।